
#এইচএসসি বাক্যতত্ত্ব
এইচএসসি বাক্যতত্ত্ব
সহজে এবং কম সময়ের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এবং
১০০% কমনের নিশ্চয়তায় সংগ্রহ করুন
মুসা স্যারের বাংলা ১ম ও দ্বিতীয় পত্র
সাজেশন ও সমাধান গ্রন্থসমূহ
প্রশ্ন ১ : বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকা আবশ্যক এবং কেন? (রাবো-১৯, ২৩, সিবো-১৯ )
উত্তর: সম্পূর্ণ রূপে অর্থ প্রকাশক এবং পরস্পর অর্থ সম্পর্কিত যে পদ সমষ্টি বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে, তাকে বাক্য বলে। যেমন: তাসনীম সকল মানুষকে ভালবাসে। ড. সুনীতিকুমার বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন-এ ভাবে-“কোন ভাষায় যে উক্তির সার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক হইতে যাহা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই রূপ একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলে। (ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ)
তবে সার্থক বাক্যের নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকা চাই:
(১) আকাঙ্ক্ষা (২) আসত্তি এবং (৩) যোগ্যতা।
১. আকাঙ্ক্ষা : বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা । যেমন-‘চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে’-বললে বাক্যটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু শোনবার ইচ্ছা হয়। বাক্যটি এভাবে পূর্ণাঙ্গ করা যায় : চন্দ্র পৃথিবীর চারদিক ঘোরে। এখানে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়েছে বলে এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য।
২. আসত্তি : মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলো এমনভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে মনোভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।
বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদ-বিন্যাসই আসত্তি।
কাল বিতরণ হবে উৎসব আমাদের স্কুলে পুরস্কার অনুষ্ঠিত। -লেখা হলে পদ সন্নিবেশ ঠিকভাবে না হওায় শব্দগুলোর অন্তর্নিহিত ভাবটি যথাযথভাবে প্রকাশ হয়নি। তাই এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য হয়নি।
মনোভাব পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য পদগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে যথাস্থানে সন্নিবেষ্ট করতে হবে: কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।-বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন।
৩. যোগ্যতা : বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন-বর্ষায় বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়-এটি একটি যোগ্যতাসম্পন্নবাক্য কারণ, বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত এবং ভাবগত সমন্বয় রয়েছে।
কিন্তু-বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে।-বললে বাক্যটি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা হারাবে। কারণ রৌদ্র প্লাবন সৃষ্টি করে না।
প্রশ্ন ২ : গঠন অনুযায়ী বাক্য কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার বাক্যের পরিচয় দাও। (দিবো-১৯, ঢাবো-১৯, ১৭,১৪,০৫,০৩, ববো-১৭,১২, সিবো, ববো-২৩)
অথবা, বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। (মবো-২৩, দিবো-২৩)
অথবা, গঠনরীতির আলোকে বাক্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর। (কুবো-২৩)
উত্তর: সম্পূর্ণ রূপে অর্থ প্রকাশক এবং পরস্পর অর্থ সম্পর্কিত যে পদ সমষ্টি বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে, তাকে বাক্য বলে। যেমন: তাসনীম সকল মানুষকে ভালোবাসে। ড. সুনীতিকুমার বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন-এ ভাবে-“কোন ভাষায় যে উক্তিটি সার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক হইতে যাহা স্বয়ংসম্পূর্ণ সেই রূপ একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলে। [ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ।]
গঠনে দিক থেকে বাংলা বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) সরল বাক্য (২) জটিল বা মিশ্র বাক্য, (৩) যৌগিক বাক্য।
(১) সরল বাক্য: যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: তাসনীম ফুল পছন্দ করে।
(২) জটিল বা মিশ্র বাক্য: যে বাক্যে একাশিক খণ্ডবাক্য থাকে এবং খন্ডবাক্যগুলো পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, সেই বাক্যকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলে। যেমন: যা ফুল তা তাসনীম পছন্দ করে। যেহেতু তাসনীম সত্য কথা বলে, সেহেতু সবাই তাকে ভালোবাসে।
(৩) যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক খণ্ডবাক্য সংযোজক, বিয়োজক প্রভৃতি বিভিন্ন অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে যখন একটি মাত্র বাক্য গঠন করে, তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: আইমান লেখাপড়ায় ভাল এবং ভদ্র।
উল্লেখ্য যে, আধুনিক বৈয়াকরণগণ ‘মিশ্রবাক্য’কে আলাদাভাবে বিভক্ত করেছেন। তাঁদের মতে, সমজাতীয় কিংবা ভিন্ন জাতীয় যাই হোক একাধিক স্বাধীন খণ্ডবাক্যের অধীন অপ্রধান খণ্ডবাক্য যুক্ত হয়ে মিশ্রিত আকারে বড় বাক্য গঠন করলে তাকে মিশ্র বাক্য বলে। মোটকথা এতে একাধিক সরল ও জটিল বাক্য মিশ্রিত হয়ে থাকে। যেমন: তিথি চাকরি করে পড়াশোনা করে, নিজের সংসার চালায় এবং ভাইয়ের সংসার দেখে।
প্রশ্ন ৩: অর্থ অনুযায়ী বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ প্রত্যেক প্রকার বাক্যের পরিচয় দাও। (ববো-১৯, চবো-১৯)
অথবা, অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর। (ঢাবো, যবো-২৩)
উত্তর: অর্থ অনুযায়ী বাংলা বাক্যকে প্রধানত সাত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. নির্দেশক বা নির্দেশাত্মক বাক্য,
২. প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাক্মক বাক্য,
৩. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য,
৪. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য,
৫. কার্যকারণাত্মক বাক্য,
৬. সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যেতক বাক্য,
৭. বিস্ময়সূচক বাক্য।
নিচে উদাহরণসহ এদের পরিচয় দেওয়া হলো:
১. নিদের্শক বা নির্দেশাত্মক বাক্য: এই বাক্যকে নির্দেশমূলক নির্দেশসূচক, নির্দেশাত্মক বিবৃতিমূলক প্রভৃতি নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে । যে বাক্যে কোন বক্তব্য সাধারণভাবে বিবৃতি বা নির্দেশ করা হয়ে থাকে , তাকে নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। যেমন: তাসনীম কবিতা পছন্দ করে। আলভী মিথ্যা কথা বলে না।
নিচে উদাহরণসহ এদের পরিচয় দেওয়া হলো:
ক. অস্তিবাচক বাক্য ও খ. নেতিবাচক বাক্য
এদের পরিচয় দেয়া হলো:
ক. অস্তিবাচক বাক্য: যে বাক্যে কোন ঘটনা ভাব বা বক্তব্যে অস্তিত্ব বা হাঁসূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্তিবাচক বাক্য বলে। যেমন: তিথি রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করে।
খ. নেতিবাচক বাক্য: যে বাক্যে কোন ঘটনায় কাজে বা ভাবে অস্বীকৃতি অনস্তিত্ব, নিষেধ বা না-সূচক অর্থ বোঝায়, তাকে নেতিবাচক বাক্য বলে।
যেমন: তিথি রবীন্দ্রসঙ্গীত অপছন্দ করে না। তাসনীম মানুষকে ঘৃণা করে না।
২. প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য: এই বাক্যকে প্রশ্নমূলক, প্রশ্নসূচক জিজ্ঞাসাত্মক বাক্যও বলা হয়ে থাকে। যে বাক্যে কোন কিছু জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক অর্থ প্রকাশ পায় তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন: তুমি কোন ক্লাসে পড়? কোন ফুল তোমার পছন্দ?
৩. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য : এই বাক্যকে আজ্ঞাসূচক, আজ্ঞাবাচক, অনুজ্ঞাবাচক, আদেশসূচক বাক্যও বলা হয়ে থাকে। যে বাক্যে আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ, নিষেধ, প্রস্তাব ইত্যাদি অর্থ প্রকাশ পায় তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন:
আদেশ: কাছে এস।
উপদেশ: সদা সত্য কথা বলবে।
অনুরোধ: দয়া করে আমার কাজটা করে দেবেন।
নিষেধ:অপরের নিন্দা করো না।
প্রস্তাব: চল, খেলা দেখে আসি।
৪. প্রার্থনাসূচক বাক্য: এই বাক্যকে ইচ্ছাসূচক, ইচ্ছাবোধক বাক্যও বলা হয়ে থাকে। যে বাক্যে ইচ্ছা, প্রার্থনা, উচ্ছ্বাস ইত্যাদি অর্থ প্রকাশিত হয় তাকে প্রার্থনাসূচক বাক্য বলা হয়ে থাকে। যেমন:
আমি যদি জন্ম নিতাম কালিদাসের কালে।
৫. কার্যকারণাত্মক বাক্য: এই বাক্যকে শর্তসূচক, শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলা হয়ে থাকে। যদি, যদ্যপি প্রভৃতি অব্যয়যোগে যে বাক্য গঠিত এবং যাতে কারণ, নিয়ম , শর্ত, স্বীকৃতি ইত্যাদি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলা হয়ে থাকে। যেমন:
কষ্ট না করেলে কেষ্ট মেলে না। (শর্ত)
মন দিয়ে পড়াশোনা না করলে পাশ করা যায় না।(নিয়ম)
৬. সন্দেহদ্যোতক বাক্য: এই বাক্যের অন্য নাম, সন্দেহাত্মক, সংশয়সূচক বাক্য। যে বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সন্দেহ, সংশয়, সম্ভাবনা, অনুমান, অনিশ্চয়া ইত্যাদি প্রকাশ করা হয় তাকে সন্দেহদ্যোতক বাক্য বলা হয়ে থাকে। যেমন:
বোধ হয়, তাসনীম আজ আসবে।
সম্ভবত আগামীকাল পরীক্ষার ফল আসবে।
৭. বিস্ময়সূচক বাক্য: যে বাক্যে বিস্ময়, হর্ষ, শোক, ঘৃণা, ক্রোধ, ভয় ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করা হয়, তাকে বিস্ময়বোধক বাক্য বলা হয়। যেমন:
বিস্ময়: কী ভয়ংকর কথা!
হর্ষ: ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বনফুল গো!
ঘৃণা: ছি ছি! এমন বাজে আচরণ করলে কী করে?
প্রশ্ন ৪ : পদক্রম কী? বাংলা বাক্যে পদক্রমের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর: বাক্যের বিভিন্ন অংশের এবং পদসমূহের যথাযথ বিন্যাসই হলো পদক্রম। নিচে বাংলা বাক্যে পদক্রমের ৫টি নিয়ম আলোচনা করা হলো:
(১) বাংলা সরল বাক্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, সবার আগে ‘কর্তা’ তারপর ‘কর্ম’ এবং সবশেষে ‘ক্রিয়া’ বসে। এই জন্য ভাষা বিজ্ঞানে বাংলা ভাষাকে বলা হয়- S-O-V (Subject-Object-Verb) ভাষা। যেমন: তাসনীম বই পড়ে। এখানে প্রথমে তাসনীম কর্তা, পরে কর্ম, এবং সবশেষে ‘পড়ে’, ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে।
(২) সম্বোধন পদ বাক্যের প্রথমে বষে। যেমন: হে দারিদ্র! তুমি মোরে করেছ মহান।
(৩) বিধেয় বিশেষণ সর্বদা বিশেষ্যের পরে বসে। যেমন: তাসনীম খুব ভালো।
(৪) সংযোজক অব্যয় (এবং ও আর) দিয়ে একাধিক বিশেষ্যপদ সংযুক্ত থাকলে, সাধারণত শেষের পদটার সাথে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: সোমা তাসনীম, তিথি, জারিফ ও আলভীর খালা।
(৫) সংযোজক অব্যয় দিয়ে একাধিক বিশেষ্যপদ সংযুক্ত না থাকলে প্রতি পদের সাথে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: তাসনীম হাতে পায়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে।
(৬) অসমাপিকা ক্রিয়া সমাপিকা ক্রিয়া সমাপিকা ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: তাসনীম চেয়ারে বসে পড়ে।
(৭) বাক্যে অধিকরণ কারক সুবিধামতো স্থানে বসতে পারে। যেমন: বাগানে ফুল ফোটে । অথবা, ফুল ফোটে বাগানে।
প্রশ্ন ৫: বাক্য কাকে বলে? একটি বাক্যের কয়টি অংশ ও কী কী? এদের পরিচয় দাও।
উত্তর: সম্পূর্ণ রূপে অর্থ প্রকাশকে এবং পরস্পর অর্থ সম্পর্কিত যে পদ সমষ্টি বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে, তাকে বাক্য বলে। যেমন-তাসনীম সকল মানুষকে ভালবাসে। ড. সুনীতিকুমার বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে- “কোন ভাষায় যে উক্তির সার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক হইতে যাহা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই রূপ একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলা হয়।” [ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ]
প্রতিটি বাক্যের দুটি অংশ থাকে। এগুলো হলো নিম্নরূপ:
(১) উদ্দেশ্য ও (২) বিধেয়
নিচে উদাহরণসহ এদের পরিচয় দেওয়া হলো:
(১) উদ্দেশ্য: বাক্যের যে অংশে কাউকে বা কিছুকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: তাসনীম খুব ভালো মেয়ে। এখানে তাসনীম হলো উদ্দেশ্য। কারণ তাসনীম সম্বন্ধে এখানে কিছু বলা হয়েছে।
(২) বিধেয়: উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। পূর্বে উল্লিখিত উদাহরণের খুব ভাল মেয়ে অংশটুকু হলো বিধেয়। কেননা এখানে উদ্দেশ্য (তাসনীম) সম্বন্ধে কিছু বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬ : বাক্যরূপান্তর বলতে কী বুঝ? অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক ও প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মগুলো আলোচনা কর।
উত্তর: বাক্যের অর্থের কোনো পরিবর্তন না করে এক প্রকার বাক্যকে আরেক প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নিয়মকে বাক্য রূপান্তর বলে। বাক্য রূপান্তর তিনভাবে হতে পারে। যথা:
১। গঠনগত রূপান্তর, ২। ভাবগত রূপান্তর ও ৩। উক্তির পরিবর্তনগত রূপান্তর।
বাক্যের গঠনগত রূপান্তর নিম্নের ছয় প্রকার হতে পারে। যেমন-
(ক) সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্য, (খ) সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্য) (গ) জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্য, (ঘ) জটিল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্য, (ঙ) যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্য ও (চ) যৌগিক বাক্য থেকে জটিল বাক্য।
বাক্যের ভাবগত রূপান্তর নিম্নের এগার প্রকার হতে পারে। যেমন:-
(ক) অস্তিবাচক বাক্য থেকে নেতিবাচক, (খ) নেতিবাচক বাক্য থেকে অস্তিবাচক, (গ) নির্দেশাত্মক বাক্য থেকে প্রশ্নবোধক, (ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্য থেকে নির্দেশাত্মক, (ঙ) নির্দেশাত্মক বাক্য থেকে অনুজ্ঞাসূচক, (চ) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশাত্মক, (ছ) নির্দেশাত্মক বাক্য থেকে প্রার্থনাসূচক, (জ) প্রার্থনাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশাত্মক (ঝ) নির্দেশাত্মক বাক্য থেকে বিস্ময়সূচক বাক্য, (ঞ) বিস্ময়সূচক বাক্য থেকে নির্দেশাত্মক বাক্য এবং (ট) নির্দেশাত্মক বাক্য থেকে সংশয়াত্মক বাক্য।
বাক্য রূপান্তর করার ক্ষেত্রে কিছু কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়ম আলোচনা করা হলো:
অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়ম:
সূত্র: (১) অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে মূল অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্য রূপান্তর করতে হয়।
যেমন:- অস্তিবাচক বাক্য-মানুষ মরণশীল
নেতিবাচক বাক্য-মানুষ অমর নয়।
সূত্র: (২) নঞর্থক অব্যয়যোগে (না, নহে, নয়, নি, নাই, নেই ইত্যাদি) অস্তিবাচক বাক্যের বিধেয় ক্রিয়াকে নেতিবাচক ক্রিয়ার রূপান্তর করতে হয়। যেমন: অস্তিবাচক বাক্য –কথাটায় তার বিশ্বাস হয়। নেতিবাচক বাক্য-কথাটায় তার অবিশ্বাস হয় না।
সূত্র: (৩) প্রয়োজন মত বাক্যের অন্য শব্দে না সূচকতা প্রয়োগ করতে হয়।
যেমন: অস্তিবাচক বাক্য-আমি যখন স্বেচ্ছায় বেড়াতে যাচ্ছি, তখন তোমার কী?
নেতিবাচক-আমি যখন স্বেচ্ছায় বেড়াতে যাচ্ছি তথন তোমার আপত্তি থাকতে পারে না।
সূত্র:(৪) ‘না’ বাচক ক্রিয়া বা না বাচক শব্দ দিয়ে বাক্যের হ্যাঁসূচকতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হয় যেমন:- অস্তিবাচক বাক্য –তাসনীম উচিত কাজ করেছে। নেতিবাচক বাক্য-তাসনীম অনুচিত কাজ করেনি।
নিচে অস্তিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তরের নিয়ম আলোচনা করা হলো:
অস্তিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তরের নিয়ম:
সূত্র: (১) অস্তিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবেধক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে বাক্যের মূল অর্থ পরিবর্তিত রেখে প্রশ্নবোধক বাক্যটিকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যার কাছাকাছি সম্ভাব্য উত্তর হবে অস্তিবাচক বাক্যটি।
যেমন:- অস্তিবাচক বাক্য- এরা অন্য জাতের মানুষ। প্রশ্নবোধক বাক্য- এরা অন্য জাতের মানুষ নয় কি?
সূত্র:(২) অস্তিবাচক বাক্যের হ্যাঁ-বাচকতা প্রশ্নবোধক বাক্যে না সূচকতায় রূপান্তরিত হবে।
যেমন:- অস্তিবাচক বাক্য-শৈশবে তর বাবা মারা যান। নেতিবাচক বাক্য-শৈশবে কি তার বাবা মারা যাননি?
সূত্র: (৩) রূপান্তরিক বাক্যে প্রয়োজন মতো ‘কে’, কি, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নাত্মক অব্যয় এবং প্রশ্ন(?) চিহ্ন বসাতে হয়।
যেমন:- অস্তিবাচক বাক্য- বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ। প্রশ্নবোধক বাক্য-বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়?
-0-